শেখ মুজিবুর রহমানের উপর বক্তৃতা | Speech on Sheikh Mujibur Rahman in Bengali
শুভ সকাল/সন্ধ্যা সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, আমার সহপাঠী এবং উপস্থিত সবাইকে। আজ আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি একটি অত্যন্ত মহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বলার জন্য, যার নাম ইতিহাসে চিরস্থায়ী হয়ে আছে—শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছিলেন একজন নেতৃস্থানীয় রাজনীতিবিদ, একজন মুক্তির পথপ্রদর্শক এবং বাংলাদেশের জাতির পিতা। তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি, এবং তাই আমি আজ তাঁর সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা তুলে ধরতে চাই।
শেখ মুজিবুর রহমান: জীবনের শুরু
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, তৎকালীন পূর্ববঙ্গের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মানবিক ও নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন। তিনি তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু করেন গোপালগঞ্জের স্কুল থেকে এবং পরবর্তীতে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়াশোনা করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন, যা ছিল তাঁর নেতৃত্বগুণ বিকাশের প্রাথমিক ধাপ।
রাজনীতির সূচনা এবং পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সেই সময় পাকিস্তান সরকার বাঙালি জনগণের উপর নিপীড়ন চালাচ্ছিল, এবং শেখ মুজিব এর বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেন। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং বাঙালিদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রথমে পাকিস্তানের শাসকদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত, প্রতিটি আন্দোলনে তাঁর নেতৃত্ব ছিল অত্যন্ত প্রভাবশালী।
৬ দফা দাবি এবং বাঙালির অধিকার
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে উত্থাপিত হয়েছিল '৬ দফা দাবি', যা বাঙালির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ছিল। এই ৬ দফা ছিল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট প্রতিবাদ এবং বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এই দাবিগুলি তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকদের ভীত করে তোলে এবং বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করে।
বঙ্গবন্ধুর উপাধি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন
১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি দেওয়া হয়। এর মানে হলো 'বাঙালির বন্ধু'। তিনি ছিলেন বাঙালির একমাত্র নেতা যিনি তাদের মুক্তির স্বপ্ন পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে, কিন্তু পাকিস্তানের শাসকরা বাঙালিদের সেই অধিকার দিতে রাজি হয়নি। এর প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ শেখ মুজিব ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যেখানে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন। তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ছাড়া এই বিজয় সম্ভব হতো না। তিনি ছিলেন সেই নেতা যিনি জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে বাঙালির মুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন এবং তা পূর্ণ করতে সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করেছেন।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নতুন বাংলাদেশ গঠনের কাজে হাত দেন। তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য কাজ শুরু করেন। রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল অপরিসীম। তিনি চেয়েছিলেন একটি স্বাধীন, সমৃদ্ধ এবং সুখী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে, যেখানে মানুষ শান্তি ও উন্নতির সাথে বাস করতে পারবে।
বঙ্গবন্ধুর শেষ দিন এবং তাঁর উত্তরাধিকার
দুঃখজনকভাবে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক নির্মম হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করা হয়। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়। কিন্তু তাঁর মৃত্যু সত্ত্বেও, তাঁর আদর্শ, তাঁর সংগ্রাম এবং তাঁর নেতৃত্ব বাঙালির হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।
বঙ্গবন্ধুর অবদান আজও আমাদের সামনে একটি আলোকবর্তিকা হয়ে আছে। তাঁর নামে বাংলাদেশে বহু প্রতিষ্ঠান, রাস্তা এবং মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। তাঁর জীবন ও কর্ম আমাদেরকে দেশপ্রেম, মানবতা এবং নেতৃত্বের গুরুত্ব শেখায়।
উপসংহার (Speech on Sheikh Mujibur Rahman in Bengali)
প্রিয় শ্রোতা, শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একজন নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাঙালির স্বাধীনতার মূর্ত প্রতীক। তাঁর ত্যাগ, সাহস এবং নেতৃত্বের কারণে আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে গর্ব করতে পারি। আমাদের দায়িত্ব হলো তাঁর আদর্শকে মেনে চলা এবং একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করা।
আশা করি, আজকের বক্তৃতা থেকে আপনারা শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক জানতে পেরেছেন। ধন্যবাদ।
এইভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী এবং তাঁর নেতৃত্বের গুরুত্ব তুলে ধরার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি সমৃদ্ধ বক্তৃতা তৈরি করতে পারে, যা বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানগুলিতে প্রশংসা কুড়াবে।
আরও পড়ুন
- সত্যজিৎ রায় র উপর বক্তৃতা, সংক্ষিপ্ত জীবনী
- শেখ মুজিবুর রহমানের উপর বক্তৃতা, সংক্ষিপ্ত জীবনী
- জগদীশ চন্দ্র বসু সম্পর্কে বক্তব্য, সংক্ষিপ্ত জীবনী
- রামমোহন রায়ের উপর বক্তৃতা, সংক্ষিপ্ত জীবনী
- রবী শঙ্কর সম্পর্কে বক্তব্য, সংক্ষিপ্ত জীবনী
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর বক্তৃতা, সংক্ষিপ্ত জীবনী
- স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে ভাষণ, সংক্ষিপ্ত জীবনী
- আমর্ত্য সেনের উপর বক্তৃতা, ভাষণ, সংক্ষিপ্ত জীবনী
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিয়ে বক্তব্য, ভাষণ, সংক্ষিপ্ত জীবনী